WHY YOU SHOULD GO FOR WEIGHT TRAINING? ওয়েট ট্রেইনিং কেন করবেন?
ব্যায়াম প্রধানত তিন প্রকার– কার্ডিও, Strength ও Flexibility।
ওয়েট ট্রেইনিং কি?
ওয়েট ট্রেইনিং এক ধরনের Strength Training ব্যায়াম। বিশেষ বিশেষ মাসেলের জন্যে ওয়েট নিয়ে ব্যায়াম করাকে বলে ওয়েট ট্রেইনিং বা Strength Training। একে Strength Training বলে কারণ, এই ব্যায়ামে মাসেল গুলোকে Strength দিয়ে ব্যায়াম করা হয়। সঠিক মাত্রার ওজন নিয়ে নির্দিষ্ট মাসেলের জন্য নির্দিষ্ট posture এ থেকে ধীরে ধীরে এটি করা হয়।নির্দিষ্ট মাসেলগুলোকে টোন বা শক্তিশালী করার জন্যে করা হয়। Strength Training নাম থেকেই বুঝতে পারছেন এটি মাসেলের শক্তি বাড়াতে কত কার্যকরী ব্যায়াম।
Strength/ওয়েট ট্রেইনিং দুই রকম হতে পারে:
১. Isometric ট্রেইনিং: স্থির ভাবে দাঁড়িয়ে বা স্থির ভাবে এক জায়গায় থেকে।
২. Isotonic ট্রেইনিং: শরীরকে গতিতে এনে বা move করে।
অনেকেই ব্যায়াম বলতে হাঁটা, দৌড়ানো, সাঁতার কাঁটা, Aerobics করা বা যোগ ব্যায়াম বুঝে থাকে। কিন্তু ওয়েট লিফটিং কি ও কেন দরকারী ব্যায়াম বা আমাদের শরীরে এর প্রয়োজনীয়তা কতটুকু তা হয়ত অনেকেই জানেন না। অনেকে, বিশেষ করে মহিলারা মনে করেন এর কোনো দরকার নেই। আবার অনেকে মনে করেন খুব হালকা ওয়েট নিয়ে করতেই হবে। ওয়েট লিফটিং করলে বা বেশি ওয়েট নিলে পুরুষদের মত মাসেল হবে ইত্যাদি।আবার অনেক পুরুষ মনে করেন শুধু মাত্র মাসেল বানানোর জন্য বা বডি বিল্ডিং এর জন্য ওয়েট লিফটিং দরকার। এটাও ভুল ধারণা। যে কোনো বয়েসের মানুষ ওয়েট লিফটিং করতে পারেন।
আবার অনেকে মনে করেন শুধু কার্ডিও করলেই চলবে, আর অন্য কোনো রকম ব্যায়াম দরকার নেই। কার্ডিওতেই অনেক ক্যালরি বার্ন হয়, ওয়েট লিফটিং এর দরকার নেই। এটিও আরেকটি ভুল ধারণা। কারণ, কার্ডিওতে অনেক ক্যালরি বার্ন হলেও, ওয়েট ট্রেইনিং এ আরো কিছু ক্যালরি বার্ন হয়।
গবেষণায় প্রমানিত হয়েছে আমাদের শরীরের জন্য ওয়েট ট্রেইনিং খুবই দরকারী। এটি যে কত উপকারী ব্যায়াম তা বলে শেষ করা যাবে না।
ওয়েট ট্রেইনিং এর উপকারিতা গুলো হচ্ছেঃ
ওজন কমায় ও নিয়ন্ত্রণ করে: কার্ডিও ব্যায়াম(৩০-৬০ মিনিট), যেমন হাঁটা , দৌড়ানো ইত্যাদির পাশাপাশি আপনি যদি ওয়েট ট্রেইনিং করেন, তবে আপনার ওজন আরো তাড়াতাড়ি কমবে, ও নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
আরো ক্যালরি বার্ন করে: কার্ডিওর মত ওয়েট ট্রেইনিং ক্যালরি বার্ন করে। ওয়েট ট্রেইনিং ব্যায়ামের সময় ক্যালরি তো খরচ হয়ই, উপরন্ত ব্যায়াম শেষ হওয়ার পরেও , যেমন: ব্যায়াম শেষ করে আপনি যখন বসে কোনো কাজ করছেন, খাচ্ছেন বা ঘুমাচ্ছেন ইত্যাদি, ক্যালরি বার্ন হতে থাকে। এই প্রক্রিয়াকে বলে ” physiologic homework.”
মাসেল বাড়ায় ও ফ্যাট কমায়: ওয়েট ট্রেইনিং মাসেল বাড়ায় ও ফ্যাট কমায়। ফলে বেশি ক্যালরি বার্ন হয়। কারণ এক পাউন্ড মাসেল দৈনিক ১০-২০ ক্যালরি বার্ন করে, কিন্তু সম পরিমান ফ্যাট বার্ন করে মাত্র ৫ ক্যালরি। তাই মাসেলের টিসু বাড়লে তা সারাদিন ক্যালরি বার্ন করতে সাহায্য করে। বয়সের সাথে সাথে আমাদের ফ্যাট বাড়তে থাকে, মাসেল কমতে থাকে। তাই আমরা দুর্বল ও মোটা হতে থাকি। এটি প্রতিহত করার উপায় ওয়েট ট্রেইনিং করা। যে কোনো বয়সেই, ওয়েট ট্রেইনিং করলে মাসেল বাড়ে ও ফ্যাট কমে। তাই শরীরের ও মাসেলের শক্তিও বাড়তে থাকে, এবং বেশি বেশি কাজ করা যায়। গবেষণায় প্রমানিত হয়েছে যে, যে সব মহিলারা সপ্তাহে ২/৩ দিন, দুই মাস ধরে ওয়েট ট্রেইনিং করেছেন, তাদের ২ পাউন্ড মাসেল বেড়েছে এবং ৩.৫ পাউন্ড ফ্যাট কমেছে। প্রতি পাউন্ড মাসেল বাড়ার ফলে ৩৫-৫০ বেশি ক্যালরি বার্ন হয়।
মাসেল টোন/শেপ করে: নির্দিষ্ট মাসেলের জন্য ওয়েট নিয়ে নির্দিষ্ট ব্যায়াম করলে সেই মাসেল টোন/শেপ হবে।
স্লিম ও আকর্ষনীয় করে: যেহেতু ওয়েট ট্রেইনিং এ ক্যালরি বার্ন হয়, মাসেল বাড়ায় ও টোন করে, ফ্যাট কমায় তাই আপনাকে আরো সুন্দর ও স্লিম দেখাবে।
বডি বিল্ড করে: যারা বডি বিল্ডিং করতে চান তারাও বিশেষ ভাবে ওয়েট ট্রেইনিং করে বডি বিল্ড করতে পারেন।
মেটাবলিসম বাড়ায়: কার্ডিও ব্যায়ামের মতই, ওয়েট ট্রেইনিং মেটাবলিসম বাড়ায়। এটি ১৫% Basal Metabolic Rate–BMR বাড়ায়। ফলে ওজন কমাতে ও নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে। বয়সের সাথে সাথে , বিশেষ করে ৩০ বছরের পরে আমাদের মেটাবলিসম কমতে থাকে, তাই ওজন বাড়তে থাকে। নিয়মিত ওয়েট ট্রেইনিং করলে করলে এটা প্রতিরোধ করা যায়।
শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি করে: ফলে দৈনন্দিন সব কাজে আরো শক্তি পাওয়া যায়, সব কাজ সহজে করা যায়, তাই মন প্রফুল্ল থাকে।
মাসেলের শক্তি বৃদ্ধি করে: এটি মাসেলের শক্তি বাড়ায়, ফলে দৈনন্দিন অনেক কাজ, যেমন: হাত দিয়ে চাপ দিয়ে কোনো কাজ করার, সিঁড়ি দিয়ে উঠা নামা করার শক্তি বাড়ে। তাছাড়া, মাসেলের শক্তি বাড়ার ফলে সহজে মাসেল পুল ও ইনজুরি হয় না।
খেলোয়াড়দের শক্তি বৃদ্ধি করে: যারা খেলাধুলা যেমন: দৌড়, ম্যারাথন, ব্যাডমিন্টন, ফুটবল, ক্রিকেট, টেনিস ইত্যাদি খেলেন, তাদের মাসেলের ও সমগ্র শরীরের শক্তি বাড়ে।
শরীরের ব্যালান্স ও flexibility বাড়ায়: এই ব্যায়ামে হাত ও পা এক সাথে ব্যবহার করা হয়, তাই সমগ্র শরীরের বা সব অঙ্গের ব্যালান্স বাড়ে, ফলে flexibilityও বাড়ে। শরীরের সব অঙ্গের সমন্বয় হয়। বয়সের সাথে সাথে যেহেতু শরীরের ব্যালান্স ও শক্তি কমতে থাকে তাই এটি খুবই দরকার। flexibility বাড়ার কারণে মাসেল পুল হয় না ও ব্যাক পেইন হতে শরীরকে বাঁধা দেয়।
শরীরের posture ঠিক হয়: ওয়েট ট্রেইনিং করার সময় posture খুব গুরুত্বপূর্ণ, তাই সঠিক posture মেনে এই ব্যায়াম করতেই হবে। ফলে আপনি জীবনের সবক্ষেত্রে, যেমন: দাঁড়ানো, বসা, হাঁটার সময়ও সঠিক posture বজায় রাখতে পারবেন। ফলে আপনার ব্যাক বোনে/ মাসেলে কোনো সমস্যা হবে না।
ঘুম ভালো হয়: ওয়েট ট্রেইনিং ব্যায়াম করলে মাসেল গুলো ক্লান্ত হয়ে শরীরে তাড়াতাড়ি ঘুম আনে, ফলে ঘুম ভালো হয়।
মন প্রফুল্ল রাখে ও বাড়ায়: আপনার যখন শরীরে শক্তি বাড়বে, ঘুম ভালো হবে, তখন তো এমনিতেই মন প্রফুল্ল থাকবে| গবেষণায় প্রমানিত হয়েছে যে, ওয়েট ট্রেইনিং করলে মানসিক অবসাদ ও দুশ্চিন্তা কমে, ফলে জীবন আরো সুন্দর হয় ও হাসি খুশি থাকা যায়। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় প্রমানিত হয়েছে যে, ১০ সপ্তাহ ওয়েট ট্রেইনিং করলে হতাশা কমে, জীবনের সব ক্ষেত্রে আত্মবিশ্বাস বাড়ে ও মানসিক অবসাদ থেকে মুক্ত থাকা যায়।
হাঁড়ের ও মাসেলের ঘনত্ব ও স্বাস্থ্য ভালো রাখে: বয়সের সাথে সাথে আমাদের হাঁড় ও মাসেল ভাঙ্গতে (sarcopenia)/ক্ষয় হতে থাকে। ওয়েট ট্রেইনিং করলে এটি অনেটাই রক্ষা করা যায় ও হাঁড়ের ও মাসেলের স্বাস্থ্য ভালো রাখা যায় ও ক্ষয় রোধ করা যায়। কারণ ওয়েট ট্রেইনিং করলে হাঁড়ের ও মাসেলের ঘনত্ব বাড়ে ও শক্ত হয়| গবেষণায় প্রমানিত হয়েছে যে, ওয়েট ট্রেইনিং করলে হাঁড়ের ঘনত্ব ৬ মাসে ১৩% বাড়ে। ৩০ বছর বয়সের পরে আমাদের মাসেল প্রতি দশকে ৩-৫ % কমতে থাকে, ফলে আমাদের মাসেলের কাজ করার শক্তি কমতে থাকে।
ব্যাক পেইন প্রতিহত করে ও ব্যাক এর ব্যথা কমায়: কারন ওয়েট ট্রেইনিং করলে ব্যাক এর মাসেল শক্ত হয়।
জয়েন্টের শক্তি, flexibility বাড়ে ও জয়েন্ট গুলো মজবুত করে: ওয়েট ট্রেইনিংএ যেহেতু অনেক শক্তি ও ওজন ব্যবহার করা হয়, তাই মাসেলের ও হাঁড়ের পাশাপাশি, জয়েন্ট গুলোর শক্তি বাড়ে। তাছাড়া জয়েন্টের টিসু গুলোকেও শক্ত করে।
Arthritis ও Osteoporosis প্রতিরোধ করে: হাঁড়ের বিভিন্ন রোগ, যেমন: Arthritis ও Osteoporosisএর ব্যথা কমায়, এটি হওয়া থেকে প্রতিরোধ করে।
ডায়বেটিস এর রোগীদের রক্তের গ্লুকোস নিয়ন্ত্রণে রাখে। যাদের ডায়বেটিস নেই তাদের এটি হওয়া থেকে প্রতিরোধ করে। কারণ গবেষণায় প্রমানিত হয়ছে যে, ওয়েট ট্রেইনিং করলে রক্তের গ্লুকোসের ব্যবহার ৪ মাসে ২৩% বাড়ে।
ক্যান্সার, হার্টের অসুখ, উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধ করে ও রক্তের ক্ষতিকর cholesterol কমায়।
ফুসফুসের কাজ করার ক্ষমতা বাড়ায়।
যারা অনেক দিন ধরে বিভিন্ন রকম রোগে ভুগছেন, তারাও এটি করে অনেক উপকার পান। কারণ এটি অনেক রোগ সম্পূর্ণ সারাতে সাহায্য করে।
সর্বপরি জীবনকে উন্নত করে, শরীরের সব দিকের উন্নতি করে ও ফিটনেস বাড়ায়।
ওয়েট ট্রেইনিং এর প্রয়োজনীয় উপকরণ–ওয়েট ট্রেইনিং এর জন্য দরকার barbells , dumbbells, weight machines ইত্যাদি।
ওয়েট ট্রেইনিং কি ভাবে করবেন?
অবশ্যই ওয়েট ট্রেইনিং এর নিয়ম কানুন ঠিক মত জেনে করতে হবে। না হলে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা হতে পারে। মাসেল পুল হতে পারে। তাই প্রথমে শুরুর সময় অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ জিম ট্রেইনারের পরামর্শ দরকার। তাই সম্ভব হলে জিমে গিয়ে ওয়েট ট্রেইনিং এর ব্যায়াম করা ভালো।
ওয়েট ট্রেইনিং এর জন্য জানতে হবে কত টুকু ওয়েট নিবেন, কত সেট ও Repetition করবেন, কোন কোন মাসেলের জন্য করবেন, আপনার ওয়েট ট্রেইনিং করার উদ্দেশ্য কি, সঠিক posture, কোন weight machine/tool এর কি কাজ ইত্যাদি।
ঘরে বসে ওয়েট ট্রেইনিং করতে চাইলে Dumbbell কিনে নিয়ে করতে পারেন। তবে, সেক্ষেত্রেও আপনার দরকার ওয়েট ট্রেইনিং এর যথাযথ জ্ঞান।
ওয়েট ট্রেইনিং এর আগে অবশ্যই ভালো মত ওয়ার্ম আপ করে নিতে হবে, আর শেষে কুল ডাউন ও স্ট্রেচিং করতে হবে। তা না হলে মাসেল পুল হবে ও মাসেলে ব্যায়াম কোনো কাজ করবে না।
অবশ্যই কার্ডিও ব্যায়ামের পাশাপাশি ওয়েট ট্রেইনিং ব্যায়াম করতে হবে। শুধু ওয়েট ট্রেইনিং করলে তেমন লাভ নেই।
ওয়েট ট্রেইনিং যেদিন করবেন, তার পরদিন অবশ্যই সেই মাসেল গুলোকে বিশ্রাম দিতে হবে| না হলে ব্যায়াম মাসেলে কাজ করবে না|
সপ্তাহে অন্তত দুই/তিন দিন, ২০/৩০ মিনিট ওয়েট ট্রেইনিং করলেই আপনি উপরের উপকারিতাগুলো পাবেন। সেই সাথে সপ্তাহে ৫ দিন ৩০ মিনিট অথবা সপ্তাহে ১৫০ মিনিট কার্ডিও করতে হবে।
ওয়েট ট্রেইনিং শুরু করার আগে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নিতে হবে, বিশেষ করে যাদের কোনো শারীরিক সমস্যা আছে।
উপরের লেখা গুলো থেকে বুঝতেই পারছেন ওয়েট ট্রেইনিং এর কত প্রয়োজনীয়তা? তাই আপনি যদি ওয়েট ট্রেইনিং না করেন, তবে তাড়াতাড়ি এটি শুরু করুন। আপনি কেন সুস্থ্য সুন্দর ভাবে বেঁচে থাকা থেকে নিজেকে বঞ্চিত করবেন? যে কোনো বয়সেই ওয়েট ট্রেইনিং শুরু করা যায়। ৬০/৭০ বয়সেও এটি করতে পারেন। মহিলাদের যেহেতু হাঁড়ের ক্ষয় বেশি হয়, তাই মহিলাদের, বিশেষ করে- পঞ্চাশোর্ধ মহিলাদের এই ব্যায়াম খুব দরকার। ২৫/৩০ বছর বয়স থেকেই ওয়েট ট্রেইনিং শুরু করা ভালো।
সংগৃহীত